Breaking

Friday, August 1, 2025

শাসনকাঠামোয় বড়ো পরিবর্তন আসছে পদ্মাপারে

 শাসনকাঠামোয় বড়ো পরিবর্তন আসছে পদ্মাপারে


বিশেষ প্রতিবেদন, অনিকেত পান্থ    

       শাসনকাঠামোয় বড়ো পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার পতনের পর ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত একবছর ধরে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন, রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক ইত্যাদির মধ্য বাংলাদেশের শাসনকাঠামোয় আমূল সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে। বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলির মতামতের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে দেশে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সংস্কারের এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হলে আগামীতে  বাংলাদেশের শাসনকাঠামোতে বড়ো ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলি বেশ কিছু বড়ো  ইস্যুতে একমত হয়েছে। যেমন : 

       প্রথমত, কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন, এমন বিধান সংবিধানে যুক্ত করা। এই সুপারিশ কার্যকর হলে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে  কোনো স্বৈরশাসকের উত্থানের পথ রুদ্ধ হবে। 

       দ্বিতীয়ত, সংসদে উচ্চকক্ষ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। উচ্চকক্ষ শাসনবিভাগকে জবাবদিহির পাশাপাশি নিম্নকক্ষে পাশ হওয়া প্রতিটি আইনের সংশোধনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

       তৃতীয়ত, সংসদে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আজ, বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, সংসদের উচ্চকক্ষে ১০০ আসন থাকবে। আর এসব আসনে প্রতিনিধি মনোনীত হবে পিআর পদ্ধতিতে।

      চতুর্থত, গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন, সংশোধন ইত্যাদির ক্ষেত্রে সংসদের  উভয়কক্ষে পাশ করিয়ে নিতে হবে। 

      পঞ্চমত, হাইকোর্টে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের পর সংবিধানে গণভোটের বিধান ফিরে এসেছে। তা ছাড়া পূর্বের ন্যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতেও একমত হয়েছে বাংলাদেশের  রাজনৈতিক দলগুলি।   

      ষষ্ঠত, সংস্কারের ধারাবাহিকতায় সংসদে বিরোধী দলের গুরুত্ব বৃদ্ধি করা পাবে। নতুন নিয়মে ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আনুপাতিক হারে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে। 

      সপ্তমত, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আর থাকছে না। আগামীতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ প্রতীকে। 

       অষ্টমত, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনের ফলে অর্থবিল ও আস্থাভোট ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সাংসদরা চাইলে দলের বিপক্ষেও ভোট দিতে পারবেন। 

        নবমত, নির্বাহীবিভাগ থেকে বিচারবিভাগকে স্বাধীন করার জন্য সুপ্রিমকোর্টের পৃথক সচিবালয় হতে পারে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি  নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠিত হচ্ছে। এ ছাড়া হাইকোর্টের বেঞ্চগুলি বিভাগীয় পর্যায়ে স্থানান্তরিত করার ক্ষেত্রে সহমতে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে।

      দশমত, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে। এর ফলে পুলিশ প্রশাসনকে আর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

      সবশেষে, শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট থেকে ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টার দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন। এই একবছরে তিনি ঘরেবাইরে বিভিন্ন ইস্যুতে সমালোচিত হয়েছেন। তাঁর মুখে অনেক সময়ই যেন বসেছে জামায়াতের ভাষা। তিনি বারেবারে ভারতবিরোধী ফাঁকা আওয়াজ দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে সেসব নিয়ে আলোচনার ঝড় বইলেও ভারত সরকার তাঁকে সেভাবে পাত্তা দেয়নি। আন্তর্জাতিক মহলেও তিনি খুব একটা প্রাসঙ্গিক হতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে মূলত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আর ছাত্র -সমন্বয়কের দাবি মেনে দেশে সংস্কার কর্মসূচি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আর এতে বাংলাদেশে আগামীদিনে  আওয়ামী লীগের পক্ষে শাসনক্ষমতায় ফিরে আসা অনেক কঠিন হয়ে গেল। কারণ নতুন বাংলাদেশ গড়তে পুরোনো অনেক কিছুই তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা আর মেঘনার জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment